রহমত নিউজ ডেস্ক 20 December, 2022 07:29 PM
দুর্নীতি একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ, যা থেকে পৃথিবীর কোনো দেশই মুক্ত নয় এবং এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশকেও দুর্নীতির ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলা করতে হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান এবং জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছে। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও মোকাবিলায় ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা-ওআইসির এবং এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে কাজ করার জন্য বাংলাদেশের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
আজ (২০ ডিসেম্বর) মঙ্গলবার সৌদি আরবের জেদ্দায় সম্মেলন শুরু হওয়া ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা-ওআইসির সদস্য দেশগুলোর দুর্নীতিবিরোধী আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের জন্য প্রথম মন্ত্রী পর্যায়ের দুই দিনব্যাপী সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন, সৌদি আরবের দুর্নীতিবিরোধী কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাজিন ইব্রাহিম আল কাহমুস। এতে ওআইসি মহাসচিব হিসেন ব্রাহিম তাহা, জাতিসংঘের ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম অফিসের নির্বাহী পরিচালক, ইন্টারপোলের মহাসচিবসহ ওআইসি সদস্য রাষ্ট্রসমূহের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন। সভা শেষে সর্বসম্মতিক্রমে ওআইসি দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশন গৃহীত হয়। এই সম্মেলনে রয়েছেন সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও ওআইসির স্থায়ী প্রতিনিধি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে আইনমন্ত্রী বলেন, আমরা বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়, ব্যাংকিং ও নন ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য উন্নত নিয়ন্ত্রণ কাঠামো ও তদারকি ব্যবস্থা, বিভিন্ন স্তরে জাতীয় দুর্নীতি প্রতিরোধ কাঠামো, উন্নত শাসন ব্যবস্থা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণসচেতনতা তৈরির জন্য প্রাতিষ্ঠানিক এবং কমিউনিটি পর্যায়ে বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়েছি। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সততা ইউনিট, সততার দোকান ও সরকারি কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার জন্য গনশুনানির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে সব স্তরে দুর্নীতি প্রতিরোধে ফৌজদারি আইন, স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন, তথ্যের অধিকার নিশ্চিতে তথ্য কমিশন, মানি লন্ডারিং আইন, সন্ত্রাসে অর্থায়ন বন্ধ, সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রতিরোধে পারস্পরিক আইনি সহায়তা, সরকারি ক্রয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ এবং ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম প্রতিরোধসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছি। অবৈধ আর্থিক প্রবাহ রোধ, বাজেয়াপ্ত সম্পদ পুনরুদ্ধার এবং ফেরত দেওয়ার মাধ্যমে একটি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে। জাতিসংঘের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কনভেনশনের সুস্পষ্ট বিধান থাকা সত্ত্বেও দুর্নীতি ও মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অবৈধভাবে পাচার করা সম্পদ পুনরুদ্ধারে কয়েকটি দেশের অসহযোগিতায় উদ্বেগ জানান আইনমন্ত্রী।
দুর্নীতি নেটওয়ার্কের অপতৎপরতা মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী কাঠামোর মূল দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে এবং তা মোকাবিলায় যুগোপযোগী উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতা, কারিগরি সক্ষমতা বৃদ্ধি, দক্ষ জনবল ও উন্নত প্রশিক্ষণ দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি বিশ্বাস করি, ওআইসির দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশন রাষ্ট্রপক্ষগুলোকে এর উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য বৃহত্তর ও দ্রুত সহযোগিতার সুযোগ দেবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সমাজের সবাইকে সম্পৃক্ত করে আমাদের ব্যাপক দৃষ্টিভঙ্গি নিতে হবে। এ পর্যায়ে আইন মন্ত্রী স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও মোকাবিলায় ওআইসি এবং এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে কাজ করার জন্য বাংলাদেশের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।